শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা:
সত্য প্রকাশে অপ্রতিরোধ্য দৈনিক সময়ের কণ্ঠ ডটকমে আপনাকে স্বাগতম  

জীবন ও জীবিকা সংকটে পড়বে লাখ লাখ হকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট টাইম : রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২, ৫:২৯ পূর্বাহ্ন

ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে আবারও সংশোধনীর জন্য আনা খসড়া বাস্তবায়িত হলে হকারদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। হকারদের জীবিকা বন্ধ করে দেবে এমন কোনো আইন না করার দাবি জানানো হয়।

আজ রোববার (১২ নভেম্বর) জনঅধিকার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকাল ৯ টায় রাজধানীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা জানান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরিফ চৌধুরী, ছিন্নমূল হকার্স সমিতির সহসভাপতি হারুন অর রশিদ, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর এর নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সানইয়াত প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, প্রস্তাবিত সংশোধনী খসড়া আইনে বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি ভ্রাম্যমান দোকানে বা ফেরি করে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে রয়েছে বিধিনিষেধ। এছাড়াও সরকারের থেকে লাইসেন্স না নিয়ে ফেরি করে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করতে পারবে না। এ আইন অমান্য করলে ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে তাদের।  করোনা পরবর্তী সময়ে ভ্রাম্যমাণ হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এমন সময় আইনটি সংশোধনীর জন্য আনা প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রান্তিক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভ্রাম্যমাণ হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন ও জীবিকা সংকটে পড়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে ছিন্নমূল হকার্স সমিতির সহসভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, ’সারাদেশে প্রত্যন্ত এলাকা/পাড়া মহল্লা/গ্রাম/থানা/বাজারে যারা ফেরি করে কিংবা ভ্রাম্যমান অবস্থায় পান ও অন্যান্য সামগ্রির পাশাপাশি সহায়ক পণ্য হিসেবে বিড়ি বা সিগারেট বিক্রয় করেন তাঁদের পুঁজি কোন অবস্থাতেই দৈনিক ৫০০/১০০০ টাকার বেশি নয়। তাঁদের পক্ষে ০৫ (পাঁচ) হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া সম্ভব না। পাশাপাশি তাঁদের বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে ভ্রাম্যমান বিক্রেতা সহ তার পুরো পরিবার চরমভাবে অর্থসংকটে পড়বে। যা অত্যন্ত অমানবিক।’

তিনি আরো বলেন, ‘কার ইন্ধনে এই আইন? এত টাকা জরিমানা মানে একটা হকারকে নি:স্ব করে ফেলা। এতে বাড়বে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি।’

মতবিনিময় সভায় বক্তরা আরও বলেন, ’প্রস্তাবিত সংশোধনী খসড়া আইনে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের উপর বিধিনিষেধ আনা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে কোনো ভ্রাম্যমান বিক্রেতা বা হকাররা কোনো ব্যক্তির কাছে সম্পূর্ণ প্যাকেট, মোড়ক বা কৌটা ব্যতীত খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করতে পারবে না। এই আইন অমান্য করলে তাকে একমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ মূলত খুচরা শলাকা ভিত্তিক বাজার। সারাদেশে বেশিরভাগ ধুমপায়ী একটি কিংবা দুটি সিগারেট ক্রয় করেন। তাদের পুরো প্যাকেট কেনার সামর্থ্য নেই। পাশাপাশি অনেক ধুমপায়ী আস্তে আস্তে ধুমপান ছাড়ার অভ্যাস করার জন্য একটি কিংবা দুটি সিগারেট কিনে। খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে সরকার তামাক খাত হতে বিপুল সংখ্যক রাজস্ব হারাবে। এছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ এই উপমহাদেশে কোথাও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এই রকম বিধান নেই। বাংলাদেশের চলমান অর্থনীতি এবং প্রান্তিক পর্যায়ে হাকারদের স্বার্থ বিবেচনায় তামাকজাত পণ্যের খুচরা বিক্রয় বন্ধের সিদ্ধান্তটি অনুচিত ও অযৌক্তিক।’

ভ্রাম্যমান হকার্স পরিষদের কামাল আহমেদ বলেন, ’প্রস্তাবিত খসড়া আইনের কতিপয় ধারা বাস্তবায়ন হলে সারাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের হাকারদের দৈনন্দিন জীবন ও জীবিকাকে চরম হুমকির মুখে পতিত করবে। এমনিতেই মহামারী করোনার ভয়াল থাবায় সারাদেশের ব্যবসায়ীদের মত প্রত্যন্ত ও প্রান্তিক পর্যায়ের হকারদের দৈনন্দিন জীবন-যাপন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছিল। সেসময় তাদের জন-জীবন ও পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। তাই এই আইন বাস্তবায়ন তাদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে।’

অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, ‘আমরা চাই ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তামাক মুক্ত হোক। দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ হকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোন অবস্থাতেই ধুমপান বা তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের বিপক্ষে নই। আমরা চাই এদেশ থেকে ধীরে ধীরে ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার স্থায়ীভাবে বন্ধ হোক। কিন্তু তা কোন অবস্থাতেই প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা প্রান্তিক পর্যায়ের খেটে খাওয়া ভ্রাম্যমাণ হকারদের জীবন ও জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে নয় ।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ.....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর