শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা:
সত্য প্রকাশে অপ্রতিরোধ্য দৈনিক সময়ের কণ্ঠ ডটকমে আপনাকে স্বাগতম  

সাংবাদিকতা চালিয়ে যাব: সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট টাইম : রবিবার, ২৩ মে, ২০২১, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

দণ্ডবিধি অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা মামলায় প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হয়েছেন। রবিবার (২৩ মে) গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে রোববার বিকেল ৪টার পর মুক্তি পান তিনি।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে রোজিনাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আদেশ দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল বাকি।

মুক্তি পাওয়ার পর রোজিনা ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাংবাদিকতা চালিয়ে যাব। সাংবাদিকসহ যারা পাশে ছিলেন, সবাইকে ধন্যবাদ।’

কারাবাসের ৬ষ্ঠতম দিনে জামিন পান রোজিনা ইসলাম। রবিবার (২৩ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ভার্চুয়াল জামিন আবেদনের শুনানির ওপর আদেশ হয়। আদালত তাকে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা এবং পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে জামিন দেন। দণ্ডবিধি ও অফিশিয়াল সিক্রেক্টস অ্যাক্টের মামলায় গ্রেফতার হয়ে গত ১৮ মে থেকে কারাগারে থাকতে হয় এই সাংবাদিককে।

ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নেন রোজিনা ইসলামের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, জোতির্ময় বড়ুয়া ও আমিনুল গনি টিটো। রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু তার বক্তব্যে বলেন, রোজিনা ইসলামকে শর্তসাপেক্ষে অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন দে্ওয়া যেতে পারে। সে সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য সমর্থন করেন।

আদালত অভিমত দেন, গণমাধ্যম গণতন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ। গণমাধ্যমের কারণেই কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল আচরণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

আদালত আরও বলেছেন, ‘কোর্ট এবং গণমাধ্যম কখনোই একটি আরেকটির জন্য বাধা হিসেবে কাজ করে না। কোর্ট সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। সুতরাং আমরা আশা করব যে,উনি (রোজিনা ইসলাম) ওনার দায়িত্ব পালনে আরও সচেতন থাকবেন।’

গত ২০ মে দুপুর ২টার সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহ’র ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি শেষ হয়। আদালত সেদিন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত।

এর আগে ১৮ মে রোজিনার বিরুদ্ধে করা পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম।

এদিকে, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ১৭ মে রাতে তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়।

রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। সেই মামলায় রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। সেদিনই সচিবালয়ে আসার আগে তিনি

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেন। হেনস্তার একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়। স্বজনদের দাবি, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে।

দীর্ঘক্ষণ সচিবালয়ের একটি কক্ষে আটক থাকার কারণে ধীরে ধীরে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন রোজিনা ইসলাম। রাতে তাকে সচিবালয় থেকে বের করার সময় পুলিশ সাংবাদিকদের প্রথমে জানায়, রোজিনা ইসলামকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। কিন্তু রাত সাড়ে আটটার দিকে তাকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পৌনে নয়টার দিকে তাকে থানায় আনা হয়।

সোমবার (১৭ মে) রাতে শাহবাগ থানায় আনার পর রাতভর রোজিনা ইসলামের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে গড়িমসি করে শাহবাগ থানার পুলিশ। এ সময় পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। তবে সে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

রাত ১১টার দিকে শাহবাগ থানা থেকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধ থানায় অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ সাংবাদিকদের ব্রিফ করে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানায়। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাতে রোজিনা ইসলামকে থানাতেই রাখা হবে।

মঙ্গলবার (১৮ মে) শাহবাগ থানা থেকে রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয়। সাধারণত এতো সকালে এই আদালতে আনার তেমন নজির নেই। রোজিনা ইসলামকে সেখানে এনে সরাসরি আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।

পরে বেলা ১১টার দিকে তাকে আদালতে তোলা হলে শুনানি শুরু হয়। মামলার যথাযথ তদন্তের প্রয়োজনে রোজিনা ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ৫ দিনের হেফাজতে পেতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সরদার আরিফুর রহমান।

শুনানি শেষে বিচারক মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দেন। আর জামিন আবেদন আংশিক শুনানি শেষে বাকি শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২০ মে) দিন রাখেন। সেই সাথে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসারও আদেশ দেন।

এই আদেশের পর রোজিনা ইসলামকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবিতে কয়েক দিন ধরেই প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রতিবাদ হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ.....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর