শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা:
সত্য প্রকাশে অপ্রতিরোধ্য দৈনিক সময়ের কণ্ঠ ডটকমে আপনাকে স্বাগতম  

জীবন ও জীবিকা সংকটে পড়বে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা: নাসিব

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট টাইম : রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে আবারো সংশোধনীর জন্য আনা খসড়া বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে বলে দাবি করেছে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশ (নাসিব)। ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীদের জীবিকা বন্ধ করে দিবে এমন কোনো আইন না করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতারা। নাসিব নেতারা জানান, করোনা পরবর্তী সময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এমন সময় আইনটি সংশোধনীর জন্য আনা প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে প্রান্তিক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন ও জীবিকা সংকটে পড়ে যাবে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) আবারো সংশোধনের প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এর খসড়া জনমতের জন্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়। তবে অংশীজনদের সাথে আলাপ আলোচনা না করেই এমন খসড়া তৈরীর বিষয়টি এরই মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। নাসিব নেতাদের দাবি, খসড়ার স্পর্শকাতর ধারাগুলো প্রত্যাহার করে বাস্তবসম্মত, যুগোপযোগী ও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীদের জীবন ও জীবিকার অনুকূলে ধুমপান ও তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা হোক।

মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য পড়েন নাসিবের সভাপতি ও ইনফরমাল সেকটর ইন্ডাষ্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলের (আইএসআইএসসি) চেয়ারম্যান মির্জা নূরুল গনী শোভন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ।

মির্জা নূরুল গনী শোভন বলেন, ‘ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সনে সংশোধিত) এর অধিকতর সংশোধনীর লক্ষ্যে প্রস্তাবিত খসড়া আইনের কতিপয় ধারা সন্নিবেশিত করা হয়েছে যা বাস্তবায়ন হলে সারাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন জীবন ও জীবিকাকে চরম হুমকির মুখে পতিত করবে। এমনিতেই অতিমারী করোনার ভয়াল থাবায় সারাদেশের ব্যবসায়ীদের মত প্রত্যন্ত ও প্রান্তিক পর্যায়ের অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন জীবন-যাপন ও জীবিকা মুখ থুবড়ে পড়েছিল এবং তাদের জন-জীবন ও পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল।’

নাসিব সভাপতি জানান, সংশোধনীর খসড়ায় কিছু প্রস্তাব আনা হয়েছে, যেমন, বাধ্যতামূলক লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ, ভ্রাম্যমান দোকানে বা ফেরি করে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ: অন্যথায় অনধিক ০৫ (পাঁচ) হাজার টাকা জরিমানা, পাবলিক প্লেসের সংজ্ঞায় চায়ের দোকান অন্তর্ভূক্ত করা এবং ওই সকল স্থানে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন নিষিদ্ধ, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ, প্যাকেট ব্যতিত খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ, ধুমপানের নির্দিষ্ট এলাকা প্রথাটির বিলুপ্তিকরণ। তিনি জানান, খসড়ায় দেওয়া এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবসম্মত নয়। এগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে।

মির্জা নূরুল গনী শোভন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় ১৫ (পনের) লক্ষ প্রত্যন্ত ও প্রান্তিক পর্যায়ে নি¤œ আয়ের খুচরা বিক্রেতা রয়েছে যার অধিকাংশই প্রত্যন্ত অঞ্চলের অস্থায়ী কিংবা ভাসমান দোকানী হিসেবে পরিচিত। যাদের কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। তাদের ব্যবসার পুঁজি খুবই নগন্য। তাদের পক্ষে সিগারেট বা তামাকজাত পণ্য বিক্রয়ের জন্য আলাদাভাবে লাইসেন্স গ্রহণ কোনভাবেই সম্ভব নয় কিংবা ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার মত আর্থিক সংগতি নেই। সুতরাং সংশোধিত এই ধারা বা আইন বাস্তবায়িত হলে ১৫ (পনের) লক্ষ প্রত্যন্ত ও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং পরোক্ষভাবে পরিবার সহ প্রায় ৭০ (সত্তর) লক্ষ মানুষ হুমকির মুখে পড়বে। যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য হতে পারেনা। এতে আইনের অপপ্রয়োগ হবে এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ আইনের নামে হেনস্তা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সারাদেশে প্রত্যন্ত এলাকা/পাড়া মহল্লা/গ্রাম/থানা/বাজারে যারা ফেরি করে কিংবা ভ্রাম্যমান অবস্থায় পান ও অন্যান্য সামগ্রির পাশাপাশি সহায়ক পণ্য হিসেবে বিড়ি বা সিগারেট বিক্রয় করেন তাঁদের পুঁজি কোন অবস্থাতেই দৈনিক ৫০০/১০০০ টাকার বেশি নয়। তাঁদের পক্ষে ০৫ (পাঁচ) হাজার টাকা জরিমানা দেয়া সম্ভব না। পাশাপাশি তাঁদের বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে ভ্রাম্যমান বিক্রেতা সহ তার পুরো পরিবার চরমভাবে অর্থসংকটে পড়বে। যা অত্যন্ত অমানবিক।’

নাসিব সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ মূলত খুচরা শলাকা ভিত্তিক বাজার। সারাদেশে বেশিরভাগ ধুমপায়ী একটি কিংবা দুটি সিগারেট ক্রয় করেন। তাদের পুরো প্যাকেট কেনার সামর্থ্য নেই। পাশাপাশি অনেক ধুমপায়ী আস্তে আস্তে ধুমপান ছাড়ার অভ্যাস করার জন্য একটি কিংবা দুটি সিগারেট কিনে। খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে সরকার তামাক খাত হতে বিপুল সংখ্যক রাজস্ব হারাবে। এছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা সহ এই উপমহাদেশে কোথাও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এই রকম বিধান নেই। বাংলাদেশের চলমান অর্থনীতি এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ক্রেতা বিক্রেতার স্বার্থ বিবেচনায় তামাকজাত পণ্যের খুচরা বিক্রয় বন্ধের সিদ্ধান্তটি অনুচিত ও অযৌক্তিক।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোন অবস্থাতেই ধুমপান বা তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের বিপক্ষে নই। আমরা চাই এদেশ থেকে ধীরে ধীরে ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার স্থায়ীভাবে বন্ধ হোক। কিন্তু তা কোন অবস্থাতেই প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা প্রান্তিক পর্যায়ের খেটে খাওয়া ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীদের জীবন ও জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে নয়।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ.....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর