তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিকভাবে লাইসেন্স প্রদানের প্রস্তাবনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব)। এ ধরনের আইন করা হলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কার কথাও জানানো হয়েছে। এ ধরনের আইন সংশোধনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বক্তারা।
আজ সোমবার (১ আগষ্ট, ২০২২) কিশোরগঞ্জ সদরে অতিথি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) কিশোরঞ্জ জেলা কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) জাতীয় পর্যায়ে সর্ববৃহৎ বেসরকারি সংগঠন হিসেবে ১৯৮৪ সাল থেকে হাজার হাজার নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তাদের নিয়ে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতকে সমৃদ্ধ অর্থবহ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে এবং দেশের জাতীয় অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করে তুলতে ভূমিকা রাখছে।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) অধিকতর সংশোধনের জন্য প্রস্তুতকৃত খসড়া প্রণয়নে নাসিবের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে যেমন ধন্যবাদ জানিয়েছেন তেমনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে নাসিবকে না রাখায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
করোনা পরবর্তীকালে জাতীয় অর্থনীতির চাকা গতিশীল ও সচল করতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান করে সরকার প্রশংসার দাবিদার হয়েছে। যা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও এখন স্বীকৃত। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার কিছু ধারা ও উপধারা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। যেগুলো হচ্ছে –
১) বাধ্যতামূলক লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ১৫ (পনের) লক্ষ প্রান্তিক নিম্নআয়ের খুচরা বিক্রেতা আছে, যার অধিকাংশই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাসমান দোকানী। কোনো বৈধ পণ্যের জন্য পৃথকভাবে লাইসেন্স নিতে হলে তা ব্যবসা নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। এই ধারাটি সরকারি নীতির পরিপন্থী।
২) ধূমপান এলাকার ব্যবস্থা বিলুপ্তিকরণ। ধূমপায়ীরা নির্দিষ্ট স্থানে ধূমপান করলে অন্যান্য অধূমপায়ীরা নিরাপদ থাকবে।
৩) খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ। খুচরা বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলে ভোক্তা এবং বিক্রেতা উভয়েরই নিজস্ব অধিকার সংরক্ষণ করতে গিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে। মাঠপর্যায়ে আইন প্রণয়ন নিশ্চিত করা যাবে না।
৪) পাবলিক প্লেসের সংজ্ঞায় চায়ের দোকান অন্তুর্ভুক্তিকরণ। এটা করা হলে জীবিকা ও আয়ের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
৫) বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধকরণ। এটা করা হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নকল পণ্যে বাজার ছেয়ে যাবে। ফলে সরকার হারাবে বিপুল পরিমাণ অভ্যন্তরীণ রাজস্ব।
৬) ফেরি করে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধকরণ। এই ধরনের কোন অবাস্তব আইন প্রবর্তন হলে নিম্নআয়ের সকল খুচরা বিক্রেতারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাদের দৈনিক আয়ের পরিমাণ কমে আসবে।
৭) সার্বিকভাবে জরিমানার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিকরণ এবং যেকোন প্রকার অভিযোগের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির অন্তর্ভুক্তিকরণ।
এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক শতাব্দীর কন্ঠর সম্পাদক আহমেদ উল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম শামসুল হক খান, কিশোরগঞ্জ চেম্বাব অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি ইকবাল আহমেদ চৌধুরী অপু উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করেন নাসিব কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আলাউদ্দিন।