শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা:
সত্য প্রকাশে অপ্রতিরোধ্য দৈনিক সময়ের কণ্ঠ ডটকমে আপনাকে স্বাগতম  

লকডাউনের মধ্যে ও জমে উঠেছে ভাসমান পেয়ারার বাজার,ভালো দাম পেয়ে খুশি পেয়ারা চাষীরা

মাসুমা জাহান,ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৩০ জুলাই, ২০২১, ৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

লকডাউনের মধ্যে ও জমে উঠেছে ঝালকাঠির ভিমরুলির পেয়ারা বাজার এবং আগের তুলনায় এখন দাম ও বেশি পেয়ে খুশি পেয়ারা চাষীরা|
ভিমরুলি পেয়ারার মোকাম ঘুরে দেখা যায় ৫/৬ শত টাকা দরে পেয়ারা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে|এবং খুচরো ৭/ ৮ শত টাকা|
এ বছর যা কিছু দিন আগে ছিল তিন চার চা৪ শত টাকা|মহামারী কোভিড ۔১৯ এর প্রভাবে বাংলার আপেলখ্যাত পেয়ারার বাজারে মন্দা চলছিল|জমছিল না পেয়ারার বাজার|
যদিও আগের মতো পাইকার ও পর্যটক নাই পেয়ারার হাটে|
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি,বরিশালের বানারীপাড়ার ও ঝালকাঠির ৩৮ টি গ্রাম জুড়ে দক্ষিণ অঞ্চলের সব চেয়ে বড়ো পেয়ারার বাগান অবস্থিত|তাই দক্ষিণ অঞ্চলের হাট বাজার আর বাগান এলাকা জুড়ে পাঁকা পেয়ারার মৌ মৌ গন্ধ চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছে|
পাইকার এবং পেয়ারা চাষীদের বেচা কেনার ধুম চলছে পেয়ারার মোকাম (হাট ۔বাজার)গুলতে|
এই পেয়ারার বাগানে প্রায় ৩৩ হাজার একর জমির উপর এই পেয়ারার রাজ্য|
বাংলার আপেলখ্যাত পেয়ারা ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে বর্তমানে|
এশিয়ার বিখ্যাত এ পেয়ারা কে স্থানীয় ভাষায় গৈয়া কিংবা সবরি বলা হয়|
তবে জাতীয় ভাবে এটি পেয়ারা নাম পরিচিত|আর পুষ্টিমানের দিক থেকে একটি পেয়ারা ৪ টি আপেলের সমতুল্য বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছে|
তাই পেয়ারা কে ভালোবেসে ‘বাংলার আপেল’ আবার কেউ ‘গরিবের আপেল’ হিসেবে গণ্য করে|
এখানে প্রতি বছর মৌসুমে বিপুল পরিমানে সুস্বাদু পেয়ারা ফল উৎপাদন হয়ে থাকে|
বাংলার আপেল নামে খ্যাত এ পেয়ারা প্রচুর উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে চাষীদের লোকসানের মুখে পড়তে হয় প্রতি বছর|
কারণ পেয়ারা দ্রুত পেঁকে যায়|তাই দ্রুত বিক্রি না করতে পারলে চাষীদেরও পড়তে হয় লোকসানের মুখে|

এ বছর পেয়ারায় দেখা দিয়েছে এনথ্রাকনোস নামক এক ধরণের ভাইরাস|যা স্থানীয় ভাবে ছিটপড়া রোগ বলে শনাক্ত করা হয়|সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করণে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ থাকলে মৌসুমী এ ফল বছর জুড়ে ভোক্তাদের চাহিদা মিটিয়ে চাষীরাও আর্থিক ভাবে লাভবান হতো|কিন্তু দীর্ঘ দিনেও উদ্যোগের অভাবে হিমাগার সহ প্রক্রিয়াজাত করণ শিল্প গড়ে না ওঠায় উৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা পেয়ারা চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে|
আষাঢ়, শ্রাবন ও ভাদ্রের অর্ধেক এই আড়াই মাস জমে ওঠে পেয়ারার বেচা কেনা|
পেয়ারা চাষ ও ব্যবসা কে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে ১০ টির ও বেশি ছোট বড়ো ব্যবসা কেন্দ্র|স্থানীয় ভাবে বলা হয় পেয়ারার মোকাম|এই মোকাম গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আট ঘর,কুড়িয়ানা,ভিমরুলি,ডুমুরিয়া,শতদশ কাঠি,বাউকাঠি|প্রতিদিন সকালে এসব মোকামে চাষীরা ছোটছোট ডিঙি নৌকায় সরাসরি বাগান থেকে পেয়ারা নিয়ে আসে পাইকারদের কাছে|তা কিনে ট্রলার যোগে নৌ পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকা চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলায়|
গত বছর ফাল্গুনে পেয়ারা গাছে ফুল ধরার পর অতিরিক্ত খরায় পানির অভাব দেখা দেওয়ায় ফুল ঝরার পাশাপাশি অনেক গাছ ও মারা যায়|
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পেয়ারা চাষীরা গাছের গোড়ায় সার এবং মাটি দিতে পারেনি|কিন্তু তার পরেও পেয়ারার ফলন এবার ভালো হয়েছে|
কেটে গেছে চাষীদের দুশ্চিন্তা|ঝালাকাঠির কাঁচবালিয়া গ্রামের পেয়ারা চাষী নূর মিয়া জানান,খড়ার কারনে ফলন ভালো না হবার ভয় ছিলো|উপরওয়ালা সহায় থাকায় পেয়ারার ফলন এবার ভালোই হয়েছে|
প্রতি বছর পেয়ারার মৌসুমে বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌ পথে বাগান দেখতে আসে পর্যটকরা|কিন্তু এবার তার ব্যাতিক্রম|করোনার কারণে তেমন পর্যটক নেই বললেই চলে|

পেয়ারা বাগান দেখে মুগ্ধ হয়েছেন বরিশাল আব্দুর রব সেরানিয়াবাত প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ হোসেনসহ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক|বছরের পর বছর ধরে পেয়ারা উৎপাদিত এসব এলাকায় চাষীদের একমাত্র সমস্যা হিমাগার ও সড়ক পথে যোগাযোগের যথাপযোগী ব্যবস্থা না থাকা|

এ ব্যাপারে ঝালকাঠির জগদীশপুর গ্রামের চাষী নির্মল মিস্ত্রি আমাদের জানান,প্রতিবছর হিমাগারের অভাবে এসব এলাকায় কয়েক কোটি টাকার পেয়ারা nosto হয়ে যায়|মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মন পেয়ারা বিক্রি হয়|তবে বাউকাঠি থেকে ভিমরুলি হয়ে কীর্তিপাশা পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত হলে পেয়ারা পরিবহনে সুবিধা হতো|প্রায়ই পেয়ারার ট্রাক সরু রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে রাস্তার কিনারে পরে যায়|ভিমরুলি মোকাম থেকে নৌ পথে খুলনা,ফেনী,ঢাকা,সিলেট,পটুয়াখালী,ভোলা,মাদারীপুর ,নাটোর বরিশালে হাজার হাজার মন পেয়ারা যাচ্ছে|

পেয়ারা বাগান ঘুরে জানা গেছে,পিরোজপুর,স্বরূপকাঠি উপজেলার আট ঘর,কুড়িয়ানা,আদমকাঠি,ধলহার,কঠুরা কাঠি,আন্দাকুল,জিন্দা কাঠি,ব্রাম্মনকাঠি,আমুয়া,মাদ্রা,পূর্ব জলাবাড়ী, আদা বাড়ী ও যৌসার গ্রাম এবং ঝালকাঠি ও বরিশালের বানিরাপাড়ায় মোট ৩৬ টি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষাবাদ হয়|কয়েক হাজার পেয়ারা বাগানে হাজার হাজার চাষী পেয়ারা চাষাবাদ করে আসছে|আর পেয়ারার চাষাবাদ ও বিপণন ব্যবস্থার সাথে ওই সমস্ত এলাকার ৭ থেকে ৮ হাজার শ্রমজীবী মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত থেকে জীবন۔জীবিকা নির্বাহ করে আসছে|


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ.....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর