১৯৪৭ সালের আগস্টে প্রায় ২০০
বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতীয়
উপমহাদেশ থেকে বিদায় নেয় ব্রিটিশরা।
কিন্তু ব্রিটিশদের এই সুদীর্ঘ শোষনের
ইতিহাস ‘শেষ হইয়াও যেন হইলো না
শেষ’। আর সেই স্বাধীনতা নাটকের
শেষ অঙ্কের সূচনা ঘটে ১৯৭১ সালের
২৬ মার্চ- যার মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের
কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে
বাংলাদেশ নামক নতুন এক ভূখণ্ড।
২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস তা প্রায় সবাই
জানে। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের কারণ বা
এর পেছনের ইতিহাসটা কি? আমাদের
মধ্যে অনেকেই সঠিকভাবে জানে না
স্বাধীনতা দিবস কি। অথচ স্বাধীনতার এই
সোনালী সূর্য ছিনিয়ে আনার জন্য
জীবন দিয়েছেন লক্ষ লক্ষ শহীদ।
২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার
ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সালের
তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতি
বছর গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগম্ভীর্যের
মাধ্যমে পালন করা হয় দিনটি।
স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস
১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে জন্ম নেয়
ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্র। কিন্তু
ভারতের পশ্চিমে অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তান
ও পূর্ব দিকের ভূখণ্ড তৎকালীন পূর্ব
পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মধ্যে
বৈরীতার হাওয়া দেখা যাচ্ছিলো শুরু
থেকেই। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত
শক্তিশালী পশ্চিম পাকিস্তান ভাষাসহ চাকরি ও
বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে
বৈষম্যের আচরণ করতে থাকে- যার
ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে
একটা অনিবার্য সংঘাতের দিকে মোড় নেয়
পরিস্থিতি।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম
পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব
পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ
জনগণের উপর হামলা চালায় ও গ্রেপ্তার করা
হয় স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার শেখ
মুজিবুর রহমানকে। তবে গ্রেপ্তারের
কিছু আগেই ২৬শে মার্চের প্রথম
প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর
করেন। ঘোষণাটি নিম্নরুপ:
এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ
থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি
বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই,
আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের
সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর
বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ
চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে
সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা
এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত
আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।
২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে
শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার
ঘোষণাপত্রটি মাইকিং করে প্রচার করা হয়।
পরে ২৭শে মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান
চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র
থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে পুনরায়
স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
কবে থেকে স্বাধীনতা দিবসের শুরু
হয়েছে
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে
স্বাধীনতা দিবসের মাধ্যমে সূচনা হয়
রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের। দীর্ঘ নয়
মাসের এই যুদ্ধের মাধ্যমে অনেক ত্যাগ
ও রক্তের মাধ্যমে আমরা বিজয় লাভ করি
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। অর্জিত হয়
মহান স্বাধীনতা। তারপর থেকেই প্রতিবছর
২৬ মার্চকে পালন করা হয় বাংলাদেশের
স্বাধীনতা দিবস হিসেবে।
২৬ শে মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা
করা হয় কবে
২৬ শে মার্চ কি দিবস- তা এখন আমরা সবাই
জানি। কিন্তু ২৬ মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস
ঘোষনা করা হয় কখন তা আমরা অনেকেই
জানি না। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২
সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক বিশেষ
প্রজ্ঞাপনে ২৬ মার্চকে বাংলাদেশে
জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করার
ঘোষণা দেয়া হয় এবং সরকারিভাবে এ
দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য
জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের
গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এই দিনটি
প্রত্যেক বাংলাদেশীর জীবনে বয়ে
আনে একই সঙ্গে আনন্দ-বেদনা-
গৌরবের এক অম্ল-মধুর অনুভূতি। একদিকে
হারানোর কষ্ট অন্যদিকে মুক্তির আনন্দ।
তবে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ছাড়িয়ে
স্বাধীনতা প্রাপ্তির অপার আনন্দই বড় হয়ে
ওঠে প্রতিটি বাঙালির কাছে। গৌরবোজ্জ্বল
এই দিনটি প্রতিবছর আসে আত্মত্যাগ,
আত্মপরিচয় ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে। সেই
সাথে স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের
দায়িত্ব-কর্তব্য। নব উদ্যমে সামনে
এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনা
নিয়ে আসে এই দিন। আমাদের উচিত এই
দিনটিকে শক্তিতে পরিণত করে নতুন
দিনের পথে এগিয়ে চলার।