বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২০ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা:
সত্য প্রকাশে অপ্রতিরোধ্য দৈনিক সময়ের কণ্ঠ ডটকমে আপনাকে স্বাগতম  

খোকসায় তিনটি আশ্রয়ন প্রকল্প হুমকীর মুখে

ষ্টাফ রিপোর্টার
আপডেট টাইম : শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২১, ১:২৭ অপরাহ্ন

ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে ইজাদার

কুষ্টিয়ার খোকসায় সরকারের তিনটি আবাসন প্রকল্পের দেড়’শ মিটারের ভিতর থেকে ফসলসহ জমির মাটি কেটে নিচ্ছে বালিমহালের ইজারাদার। ফলে আশ্রয়ন প্রকল্প গুলো নদী ভাঙনের কবলে পরবে বলে আশঙ্কা করছে ভুমিহীনরা। এছাড়াও ইজারাদারে মাটিকাটার যন্ত্র স্ক্যাবিটার পোড়ানোর মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ৩০ ভূমিহীন।

গড়াই নদীর ভাঙন উপদ্রুত ওসমানপুর ইউনিয়ন হিজলাবট ও খানপুর মৌজায় হিজলাবট দ্বিপচর আশ্রয়ন প্রকল্প। প্রায় দুই যুগ ধরে ১৭০টি পরিবারের এ আবাসনে বসবাস করছে। এর পূর্বপাশে জেগে ওঠা চরে খোকসা ইউনিয়নে হিলালপুর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প। এখানেও প্রায় ৫৫ টি পরিবার বসবাস করে। এবারে মুজিববর্ষের ভূমিহীন ও আশ্রয়হীনদের আবাস প্রকল্পে ৩০ পরিবারের জন্য সেমিপাকা বাড়ি নির্মান করা হচ্ছে মোড়াগাছা হেলিপ্যাডের জমিতে।

প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইজারাদার প্রথমে নদীর চর থেকে বালি কাটতে শুরু করে। কিন্তু হেলিপ্যাডের ওপর মুজিবর্ষের আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মান করা মাটির ট্রাক চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তারা নতুন করে আবাসন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রামে যাবার একমাত্র রাস্তার ব্রিজের ১০ মিটারের ভিতর থেকে শুরু হয় ফসলি জমিকাটা।

এ নিয়ে ভুমিহীনরা আপত্তি তুলেছে। তারা নালিশ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে গিয়েছিলন। তাতে কাজ হয়নি। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শনের পর ফসলি জমিকাটার মাত্রা চরমে পৌচছে। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা মাটি কাটার যন্ত্র স্ক্যাবিটার দিয়ে শতশত ট্রাক মাটি কাটা হচ্ছে। ট্রাকে করে এ মাটি পরিবহন করা হচ্ছে মুজিবর্ষের আবাসন প্রকল্পের ওপর দিয়ে।

সম্প্রতি এক রাতের আধারে দুর্বৃত্তরা ইজারাদারের একটি মাটি কাটা যন্ত্র পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় ১০জন ভূমিহীনসহ বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে জেল হাজতে আছে ভূমিহীন শামসুল শেখ। একদিকে ইজারাদারের সন্ত্রাসী বাহিনী অন্যদিকে পুলিশের ভয়ে পানিয়ে বেড়াচ্ছে ভূমিহীন কাজেম, ছামিরুল, রাজন, জহিরুলসহ ৩০ জন। অনাহারে অর্ধাহারে জীবন পার করছে এসব ভূমিহীনদের পরিবারের সদস্যরা।

উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মোড়াগাছা মৌজায় গড়াই নদীর জেগে ওঠা চরের খাস জমিতে এরশাদ সরকারে আমলে হেলিপ্যার্ডটি তৈরী করা হয়েছিল। বর্তমানে এখানে নির্মান করা হচ্ছে মুজিববর্ষের আশ্রয়ন প্রকল্প। এর থেকে দুই’শ মিটারের ভিতরে ওসমানপুন ইউনিয়নের হিজলাবট দ্বিপচর আশ্রয়ন প্রকল্প। এরপূর্ব পাশে হিলালপুর গুচ্ছগ্রাম। এসব আবাসন ও গুচ্ছ গ্রামের মধ্যে সংযোগ রক্ষায় গতবছর ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দের ২৮ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ব্রিজ নির্মান করা হয়েছে। ব্রিজ পার হয়েই দ্বিপচরের পূর্বদিকে প্রায় অর্ধশত বিঘা জমিতে ভুমিহীনরা ফসল আবাদ করে আসছে। এসব জমি পার হয়ে গড়াই নদীর খানপুর হিজলাবট মৌজার বালি মহল। যা সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের দপ্তর থেকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগে ইজারাদার এখন বলিমহালে না গিয়ে নদী তীরের কৃষকের ফসলি জমি থেকে মাটি সহ ফসল কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে নদী ভাঙনের হুমকীর মুখে পরছে এসব আবাসন ও আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবার গুলো।

সর্বশেষ শনিবার সকালে জমির ফসলসহ মাটি কাটা বন্ধের দাবিতে গড়াই নদীর চরে জমায়েত হয়েছিল ভূমিহীন নারী পুরুষ। তারা আশ্রয়ন রক্ষায় দাবি জানা। এখানেই কথা বলা ইজারাদারের দায়ের করা মামলায় আটক শামসুল শেখের স্ত্রী আনেচা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, ইজারাদারের মিথ্যা মামলায় স্বামী জেলে আটক। ছোট ছেলেটার অসুখ। নদীতে মাছ ধরে তাদের সংসার চলে। বর্তমানে তার বাড়িতে খাবার নেই। তিনি দাবি করেন, ইজারাদার মাসুদের ব্যক্তিগত শত্রুরা তার মাটিকাটার মেশিন পুড়িয়ে দিয়েছে। আর মামলার শিকার হচ্ছে সাধারন ভূমিহীনরা। তিনি ফসলি জমিকাটা বন্ধ করে নদীর বালু চর থেকে বালি তোলার দাবি বরেন।

ভূমিহীন খুশি, রাশিদাদেরও একই দাবী। তারা বলছে এভাবে ব্রিজসংলগ্ন এলাকা থেকে ফসলি জমির মাটি কাটা হলে আগামী বর্ষায় নদী ভাঙন বাড়বে। ফলে তারা আবার আশ্রয়হীন হয়ে পরবে।

বালিমহালের ইজাদার মাসুদ জানান, দীর্ঘদিন বালিমহাল ইজারা না হওয়ায় দ্বিপচরের আবাসন প্রকল্পের একাংশে মাটি ও বালি জমে উচু চরে পরিনত হয়। সেখানে কৃষকরা ফসল ফলাতো সত্য কিন্তু বালি মহালে রাস্তা না পেয়ে প্রশাসনের নির্দেশে সেখান থেকে বালিমাটি কাটা হচ্ছে। তিনি ফসল তছরুপের ক্ষতিপুরণ দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু তার একটি স্ক্যাবিটার পুড়েয়ে দেওয়া পর তিনি মামলা করেছে। এ ছাড়া যারা মোবাইলে ও সামনা সামনি হুমকী দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছেন।

ভূমিহীন কৃষকের ক্ষতির কথা ভেবে ইজারাদার ঘাট বন্দের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলেছিলেন কিন্তু প্রশাসন তার প্রস্তাবে রাজি হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসাহক আলী জানান, তিনি ট্রেনিং থেকে স্টেশনে ফিরছেন। বালিমহলে আসলে যে কি হয়েছে তা না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবেনা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন বলেন, বালি মহালে গাড়ি নেওয়ার জন্য ইজাদার রাস্তা বানোর চেষ্টা করছে। তবে সরকারের খাস খতিয়ান ভুক্ত বালিমহলের ওপর পলির স্তরজমে যাওয়ায় সেখানে কিছু লোক চাষ আবাদ করত। ব্রিজ বা আশ্রয়ন প্রকল্পের যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে ইজারাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এক জমির ইজারাদার কৃষকে ক্ষতিপুরনও দিয়েছে বালিমহলের ইজারাদার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ.....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর